প্রতারণা করে গড়েছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ
দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। মিঃ আবদুল কাদের নাম তার। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সুবর্ণচরে। ঢাকায় রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট। নয়তলা বাড়ি কিনেছেন গাজীপুরে। এক সময় মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করতেন । নিজের কৌশল ও প্রতারণার ফাঁদে চাকরিপ্রার্থী, ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের প্রতারিত করে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
কাদের বেশিরভাগ সময় অতিরিক্ত সচিবের পরিচয় দিতেন। আবার কখনও বিশিষ্ট ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনের দাবি করতেন। দেহরক্ষী নিয়ে অস্ত্র ও ওয়াকিটকিসহ চলতেন। কোটি টাকা দামের প্রাডো গাড়িসহ বিপুল পরিমান সম্পদ রয়েছে তার। প্রতারণা ও জিম্মি করেই সব সম্পদ গড়ে তোলেন আবদুল কাদের।
অবশেষে গ্রেফতার;
এক যুগের বেশি সময় ধরে সরকারি অনুদানে বাড়ি ও খামার তৈরির নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ভুক্তভোগী অনেকের অভিযোগের ভিত্তিতে মিরপুর তার নিজস্ব বাসা ৬ নম্বর সেকশন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার সাথে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয় ও জব্দ করা হয় কাদেরের কোটি টাকা দামের প্রাডো গাড়িটি।
গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন, আবদুল কাদেরের দ্বিতীয় স্ত্রী ও সততা প্রোপার্টিজের চেয়ারম্যান শারমিন চৌধুরী ছোয়া, অফিস ম্যানেজার শহিদুল আলম ও অফিস সহায়ক আনিসুর রহমান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে শনিবার দুপুরে অতিরিক্ত কমিশনার ( ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার জানান, এক সময় কাদের মাছ ধরে ও মাঝির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বর্তমানে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। প্রতারণা করেই এই সম্পদ গড়েছেন।
কোটি টাকার সম্পদ
ঢাকার গুলশান-১ নম্বরে জব্বার টাওয়ারে প্রায় ৬ হাজার স্কয়ার ফিট জায়গাজুড়ে রয়েছে ভিআইপি অফিস। কারওয়ান বাজারে রয়েছে আরও একটি নামেমাত্র অফিস। মিরপুর-৬ নম্বরে বসবাস করলেও তার একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। গাজীপুরের বোর্ডবাজারে নয়তলা বাড়ি কিনেছেন, পূবাইলে রয়েছে ৮ বিঘার বাগানবাড়ী। বিভিন্ন ব্যাংকেও তার নামে আছে লাখ লাখ টাকা। অঢেল সম্পদের মালিক এই কাদেরের কোনো বৈধ উপার্জন নেই। জিকে শামীম গ্রেপ্তারের আগে কাদের গানম্যান নিয়ে চলাফেরা করতেন। বর্তমানে নিজেই অস্ত্র ও ওয়াকিটকি নিয়ে চলেন।
গ্রেফতার কৃত ডিবি পুলিশ বলছে, মুসা বিন শমসেরের সঙ্গে কাদের একাধিক ছবি তুলে চাকরিপ্রার্থী, ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করতেন। তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন তার আইন উপদেষ্টা বলে।
বেশ কিছু ভুঁইফোড় কোম্পানিও রয়েছে তার নামেমাত্র। এগুলোর মধ্যে হলো, ঢাকা ট্রেড করপোরেশন, জমিদার ট্রেডিং, চৌধুরী গ্রুপ, সামীন এন্টারপ্রাইজ, হিউম্যান ইমপ্রুভমেন্ট ফাউন্ডেশন, সততা প্রোপার্টিজ, ডানা লজিস্টিকস ও ডানা মোটরস।
মিঃ কাদের বড় ধরনের প্রতারণা করেন হিউম্যান ইমপ্রুভমেন্ট ফাউন্ডেশনের ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের’ মাধ্যমে। সরকারি অনুদানে বাড়ি ও খামার তৈরি করার নামে ২০০৪-২০০৬ সালে দেশের শত শত মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা।
তৈরী করতে জাল কাগজপত্র
কাদের ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পল্লবী ও তেজগাঁও ছাড়াও আরও একাধিক থানায় কয়েকটি মামলা রয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক থেকে ২০ কোটি বা তার বেশি টাকার লোন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেও প্রতারণা করতেন তিনি। কাদের সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের শত শত কোটি টাকার ঠিকাদারি ও সেনাবাহিনীর কয়েকটি প্রকল্পের কাজ পেয়েছেন বলে জাল কাগজপত্র তৈরি করতেন ।