হাইকোর্টের রায়ে নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নির্বাচিতদের ওপর এবার টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেছেন আন্দোলনকারীরা।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে শিক্ষা ভবনের সামনে সচিবালয় অভিমুখী সড়কে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে।
আটকদের মধ্যে দুজনের নাম-পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা থেকে আসা মাহমুদুল হক ফয়সাল ও কুমিল্লার উজ্জল হোসেন। তারা দুজনই তৃতীয় ধাপে (ঢাকা-চট্টগ্রাম বিভাগ) নিয়োগ পরীক্ষায় সহকারী শিক্ষক পদে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
এর আগে বেলা ১১টায় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে তাদের পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ শুরু হয়।
বিকেল ৩টায় শাহবাগ মোড় থেকে পদযাত্রা নিয়ে সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। পৌনে ৪টার দিকে তাদের শিক্ষা ভবনের সামনের সড়কে আটকে দেয় পুলিশ।
একপর্যায়ে তাদের ওপর জলকামান থেকে পানি ছিটিয়ে ও লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। পুলিশের লাঠিপেটায় পুরুষ প্রার্থীরা সেখান থেকে সরে গেলেও রাস্তায় বসে বিক্ষোভ করছিলেন নারী প্রার্থীরা।
বিকেল ৫টার দিকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। এ সময় কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে প্রিজন ভ্যানে তোলে। তাদের মধ্যে তিনজনকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট। তাৎক্ষণিক তারা হাইকোর্টে এর প্রতিবাদ জানান। এরপর থেকে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে আসছেন তারা।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০২৩ সালের বিজ্ঞপ্তি তিনটি ধাপে দেওয়া হয়েছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম এবং অপেক্ষমাণ তালিকা থেকেও নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় ধাপের চূড়ান্ত নিয়োগ নিয়ে তালবাহানা চলছে। একই সঙ্গে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের প্রার্থীদের নিয়োগ শেষে যোগদান করানো হয়েছে। তৃতীয় ধাপে এসে নতুন নিয়মের দোহাই দিয়ে আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।
জানা যায়, সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা অনুসরণ করার অভিযোগে উত্তীর্ণদের ফলাফল প্রকাশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নিয়োগবঞ্চিত ৩০ প্রার্থী হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৯ নভেম্বর বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।
আদালত তার আদেশে এ নিয়োগের কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। এছাড়া রুলে ৩১ অক্টোবর ফলাফল প্রকাশের বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ বিষয়ে ১১ নভেম্বরের নির্দেশনা সংবলিত স্মারক কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। সেই রুলের শুনানি শেষে ৬ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করা হয়। (সূত্র: শিক্ষাবার্তা)